'ধর্ষণ' তিন অক্ষরের একটি ছোট শব্দ। অথচ এই শব্দটি ধারালো ছুরির চেয়েও তীক্ষ্ণ ভাবে একজন মানুষের জীবন ক্ষত-বিক্ষত করে দিতে পারে। ধর্ষক হয়তো জানেও না সে একজন মানুষকে সারা জীবনের জন্য পাহাড়সম মানসিক কষ্ট দিয়ে গেল। ঠিক মানুষ না আক্ষরিক অর্থে মেয়ে মানুষ। আমাদের সমাজ সেটাই ভাবে। একজন মেয়ে মানুষকে সবার আগে মানুষ ভাবা উচিৎ। যা আমাদের পরিবার, সমাজ-ব্যবস্থা কখনও শেখায়নি।
আমাদের ছোট থেকেই শেখানো হয়, মেয়ে মানুষ আর ছেলে মানুষ। খুব সর্তকতার সাথেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদেরকে আলাদা করা হয়েছে। তাদেরকে অন্য রকম চোখে দেখা হয়। এই অন্য রকম দেখাটা কিন্তু আসলেই অন্য রকম হতে পারতো। যেখানে একজন মেয়ে মানুষের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া উচিত। সেখানে তাদেরকে মানুষ হিসেবেই দেখা হয় না, দেখা হয় মেয়ে মানুষ হিসেবে। অথচ আপনার-আমার পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণ করার কৃতিত্বের বিরাট অংশ একজন মায়ের। তিনিও একজন মেয়ে। আপনার ছোট-খাটো আবদার, ফুট-ফরমায়েশ খাটছে আপনার ছোট বোনটিই। আপনার সমস্ত জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গিনী হয়ে পাশে যিনি থাকছেন তিনিও একজন মেয়ে মানুষ। আপনার সংসার ধর্ম রক্ষা করা, আপনার সন্তান লালন-পালন সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিচ্ছে একজন মেয়ে মানুষ। তাহলে একটু ভেবে দেখুন, যে মানুষগুলো সারা জীবনে শতরুপে আপনার পাশে থাকছে। তাদের কি আসলেই একটু আলাদা চোখে দেখা যায় না। একটু বাড়তি সম্মান দেয়া যায় না। যদি তাও দিতে না পারেন, একজন মানুষ হিসেবে তো তার সুস্থ-সুন্দর সমাজে বসবাস করার অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।
গত কয়েক বছরে ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এই পরিসংখ্যান প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যা সুনির্দিষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে আমাদের নীতি-নৈতিকতার ভিত কতখানি নড়বড়ে হয়েছে। প্রতিবার কিছু ধর্ষণের কেইস মিডিয়ায় আসে, আমরা নড়েচড়ে বসি। সংবাদ মাধ্যম, সোস্যাল মিডিয়াতে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ চলে। প্রতিবাদ -মিছিল চলে। আবার নতুন ঘটনা আসে, পূর্বের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। অথচ এ রকম হাজার হাজার নারি ঘরে-বাহিরে প্রতিদিন ধর্ষণের স্বীকার হয়। কেউ কেউ পরিবার-সমাজ, চক্ষু লজ্জার ভয়ে মুখ খুলে না। আমাদের অগোচরেই থেকে যায় হাজারো কাহিনি।
ধর্ষণের হাজারো কারণ থাকতে পারে। সেসব আলোচনায় যাবো না। শুধু একটি কথাই বলছি, আমরা কি আমাদের পরিবারের ছেলে শিশুটিকে যথাযথ শিক্ষা দিচ্ছি? সবকিছুর আগে আমাদের পরিবারের ছেলে সন্তানটিকে একজন মানুষকে মানুষ হিসেবেই ভাবতে শেখাতে হবে। তার মধ্যে অন্তত এটুকু নৈতিকতার ছোয়া দেয়া উচিত যাতে করে সে কোনো মেয়েকে মেয়ে মানুষ নয়, মানুষ ভাবতে শেখে এবং একজন মানুষ হিসেবে সে সভ্য সমাজে অন্য একজন মানুষের সম্মান খর্ব করতে পারে না।
পাথওয়ে এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, “মাতৃভূমিকে বাঁচানোর জন্য যেমন দেশের মানুষ একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তেমন নারীকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজে নারীকে ধর্ষণের ভয়ালগ্রাস থেকে রক্ষা করা যাবে।”।