
১১ বছরে অবৈধ আয়ে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বিআরটিএ কর্মকর্তা
২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ণ
রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখন ঘুষ-দুর্নীতি ও দালালচক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার কাজ করতে হলে দালালের আশ্রয় নিতে হয়। চাহিদামতো অর্থ না দিলে কোনো ফাইল নড়ে না, আর প্রতিবাদ করলে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহিতাদের।
দুদক একাধিকবার অভিযান চালিয়ে অসাধু কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে তারা ফের আগের মতোই কাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার
রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার বাসিন্দা সুমন শেখ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে সিল কন্ট্রাক্টর মো. আক্রামুজ্জামানের কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে মারধরের শিকার হন। সুমন শেখ বলেন, "এক বছর আগে গাড়ির কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা দিয়েছিলাম আক্রামুজ্জামানকে। আজ কাগজ নিতে গেলে সে ব্যাংক স্লিপ চায়। আমি বলি—এক বছর আগেই তো দিয়েছি। তখনই সে থাপ্পর মারে। প্রতিবাদ করলে আরও কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে।"
তিনি বলেন, টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় ফেরত চাইলে এমন মারধর সহ্য করা যায় না। এর বিচার দাবি করেছেন তিনি।
দুই বছরেও কাজ হয়নি
বিল্লাল হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, "ড্রাইভিং লাইসেন্স ভারী থেকে হালকা করার জন্য ৮ হাজার টাকা চেয়েছিল আক্রাম। ৬ হাজার টাকা দিয়েছি দুই বছর হলো, এখনো কাজ হয়নি।"
দুদকের অভিযানে গ্রেপ্তার ৪ জন
ড্রাইভিং লাইসেন্সে অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগে গত ৭ মে রাজবাড়ী বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় - অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান (বেলায়েত হোসেনের ছেলে), দালাল আশিক খান,লিয়াকত আলী,ও মুনছুর আহমেদ।
দুদক ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে মোট ৭২ হাজার ৪২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, "বিআরটিএতে লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার করা টাকা জব্দ করা হয়েছে এবং মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
স্থানীয়রা জানান, রাজবাড়ী বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় আক্রামুজ্জামান ও লিয়াকত আলী জেলার বিভিন্ন এলাকায় দালালচক্র গড়ে তুলেছেন। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারেন না। দালালের মাধ্যমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়।
যারা দালালের সাহায্য ছাড়া পরীক্ষা দেন, তাঁদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সেবাগ্রহীতা বলেন, "তিনবার পরীক্ষা দিয়েছি—তিনবারই ফেল করিয়েছে। পরে দালালের মাধ্যমে ১৯ হাজার টাকা দিয়েছি, কিন্তু লাইসেন্স পাইনি। এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।"
আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি, কোটি টাকার সম্পদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় দুইতলা বাড়ি ও জাপানি প্রাইভেটকারের মালিক। এ ছাড়া সজ্জনকান্দা এলাকায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় আরেকটি দ্বিতীয়তলা ভবন কিনেছেন বলে জানা গেছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদ কয়েক কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তাঁর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিআরটিএর কেউ নন
রাজবাড়ী বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, "আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তা নন, তিনি বহিরাগত। সেবাগ্রহীতা মারধরের বিষয়ে আমাকে এডিএম স্যার জানিয়েছেন। আমি বর্তমানে বাইরে আছি, পরে বিষয়টি দেখব।"