বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

‘আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ প্রকাশ: পোস্টার, ড্রোন ও বিদেশে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা


ইসি নতুন ‘আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ প্রকাশ করেছে। এতে পোস্টার, ড্রোন, বিদেশে প্রচারণা ও AI দিয়ে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি ভাঙলে ছয় মাসের জেল ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।

১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ 

‘আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ প্রকাশ: পোস্টার, ড্রোন ও বিদেশে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য নতুন ‘আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়। এবারের বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার, প্রচারণায় ব্যয় সীমা, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণসহ নানা বিষয়ে নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থীর সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আর রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তদন্তে প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও থাকবে কমিশনের হাতে।

 

পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও দেওয়াল লিখনে নিষেধাজ্ঞা

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে কোনো প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া রেক্সিন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপাদানে তৈরি প্রচারণা সামগ্রীও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রচারণায় ব্যবহৃত ব্যানার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুন কেবল সাদা-কালো রঙে ছাপানো যাবে। ব্যানারের আকার সর্বোচ্চ ১০ ফুট × ৪ ফুট এবং লিফলেট A4 সাইজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্যানারে কেবল প্রার্থীর ও দলীয় প্রধানের (যদি থাকে) ছবি ব্যবহার করা যাবে; অন্য কারও ছবি দেওয়া যাবে না।

দেওয়াল লিখন বা অঙ্কনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যাবে না, এবং প্রতীক হিসেবে কোনো জীবন্ত প্রাণী ব্যবহারেরও অনুমতি নেই।

ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মশাল মিছিলে নিষেধাজ্ঞা

নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো ধরনের ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা আকাশযান ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলীয় প্রধান বা সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা কেবল যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সেখান থেকে কোনো প্রচার সামগ্রী ছোড়া বা প্রদর্শন করা যাবে না।

মশাল মিছিল, শোডাউন বা যানবাহনসহ র‌্যালি আয়োজন করা নিষিদ্ধ। মনোনয়নপত্র জমার সময়ও কোনো ধরনের মিছিল করা যাবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার: প্রথমবারের মতো নিয়ম প্রণয়ন

ইসি এবার প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করেছে। প্রার্থী বা দলকে প্রচার শুরু করার আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ব্যবহারকৃত প্ল্যাটফর্মের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি ও ইমেইল তথ্য জমা দিতে হবে।

বিধিমালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর, ঘৃণাত্মক বা মিথ্যা কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা কোনো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষা বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া নির্বাচনের স্বার্থে ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহারও নিষিদ্ধ। যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য শেয়ার বা প্রকাশ করলেও তা বিধিভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।

সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের সীমাবদ্ধতা

সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ তাঁদের সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে কোনো নির্বাচনি কার্যক্রম যুক্ত করতে পারবেন না। নির্বাচনে নিজের বা অন্যের পক্ষে প্রচারণায় সরকারি গাড়ি, প্রচারযন্ত্র বা অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ।

তাঁরা ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে বা গণনাকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না— যদি না তাঁরা প্রার্থী হন বা নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।

জনসভা, সমাবেশ ও ক্যাম্পের নিয়ম

জনসভা আয়োজনের আগে প্রার্থী বা দলকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং পুলিশকে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে অবহিত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক বা জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এমন স্থানে সভা করা যাবে না।

প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌরসভা বা ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী কেবল একটি নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। সেখানে খাদ্য, পানীয় বা উপহার দেওয়া যাবে না। গেইট, তোরণ, আলোকসজ্জা বা বড় আকারের প্যান্ডেল নির্মাণও নিষিদ্ধ।

প্রচারণার সময়সীমা ও শব্দের সীমা

ভোটগ্রহণের ৩ সপ্তাহ আগে থেকে প্রচারণা শুরু করা যাবে, এবং ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে তা বন্ধ করতে হবে।

একই এলাকায় একসঙ্গে তিনটির বেশি মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না, এবং শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের বেশি হওয়া নিষিদ্ধ। প্রচারণা চালানো যাবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

ব্যয়সীমা ও স্বচ্ছতা

প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয়সীমা Representation of the People Order অনুযায়ী নির্ধারিত থাকবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, বুস্টিং বা কনটেন্ট তৈরির ব্যয়ও এই সীমার মধ্যে গণ্য হবে।

সব ব্যয় ২০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করতে হবে। বিদেশি অর্থায়নে প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ ও আচরণবিধি প্রতিশ্রুতি

ভোটকেন্দ্রে শুধু নির্বাচনি কর্মকর্তা, প্রার্থী, এজেন্ট, পর্যবেক্ষক ও ভোটাররা প্রবেশ করতে পারবেন। প্রার্থীর প্রতীক বা প্রচারণামূলক পোশাক পরে ভোটকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না।

প্রতীক বরাদ্দের পর রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের তত্ত্বাবধানে সব প্রার্থী একত্রে তাঁদের ইশতেহার পাঠ করবেন এবং আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার করবেন।

ইসি’র বার্তা

ইসি জানিয়েছে, এই বিধিমালা নির্বাচনে সমতা, স্বচ্ছতা ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। কমিশন বলেছে, আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের যুগে নির্বাচনি আচরণে নৈতিকতা ও আইনি সীমারেখা স্পষ্ট করতেই নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।